Baha Parab is the spring festival of Santhal, Munda, Ho and other tribes of India. Baha means flowers, while Parab means festival. This festival of flowers is observed to pray to Marang Buru (male deity) and Jaher Ara (female deity). Naikey (the priest) offers leaves and flowers of Sal tree to Jaherthan (altar) and there after distributes the holy Sal flowers among the devotees. He goes from door to door to bless everybody and the ladies wash his feet with oil and water. Along with this ritual, songs, dance, Madal drum beats go on with great enthusiasm. This blog is featured on experiencing Baha Parab in Gurrabera village of the district Purulia in West Bengal, India. If you want to experience the same, please write down your specific queries in the comment section.
আমরা আওয়াজটার দিকে দৌড়াচ্ছিলাম, নাকি আওয়াজটাই হ্যামলিনের বাঁশিওলার সুরের মতো আমাদের টানছিল জানি না। শুধু মনে আছে তখনও চাঁদ-না-ওঠা রাত-আকাশ ছিল। পাহাড়-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অন্ধকার-ঢাকা রাস্তা। দূর থেকে ধামসা-মাদলের আওয়াজ ভেসে আসছে আর অনেকগুলো মেয়ে গান গাইছে। আমরা ওই গানের তালে তালে জোরে জোরে পা চালাচ্ছি গুররাবেরার দিকে। আজ ওদের বাহা পরব। সাঁওতালদের দেবতা মারাং বুরু আর দেবী জাহের আয়ের পুজো। পুজো শেষ হলে রাতের বেলা জমিয়ে নাচগান হবে। আর পরদিন হবে হোলিখেলা।
বসন্তকালে সাঁওতালদের বাহা পরব হয় ঠিকই, তবে কোন গ্রামে কবে পালন হবে তার দিনক্ষণ জানা ছিল না। দোলের সময় পুরুলিয়া গেছিলাম ওই আর পাঁচজনের মতো পলাশকুসুমভরা বসন্ত দেখতেই। গুররাবেরা গ্রামের বাহা পরবের কথাটা বলল মথুর টুডু। মথুরদার বাড়ি ওখানে। মুরগুমা থেকে দু কিলোমিটার মতো হাঁটলে গুররাবেরা। পুরুলিয়ার মুরগুমায় যে রিসর্টে ছিলাম, সেখানে রান্নার কাজ করে ও। দোল আর হোলি দুদিন মুরগুমা-যাপনের পর তিন নম্বর দিনে আমাদের প্ল্যান ছিল একটা গাড়ি নিয়ে এধার-ওধার পলাশ-হপিং করে রাতের বেলা পুরুলিয়া টাউন থেকে ফেরার বাস ধরা। সেই মতো চেক আউট করে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছি। মথুরদার সাথে সৌজন্যমূলক খেজুর করতে গিয়েই জানতে পারলাম আজ রাতে ওদের গ্রামে বাহাপরব৷ দমে নাচগান হবে।
এমন না যে সাঁওতাল নাচগান দেখিনি আগে। উত্তরবঙ্গের বা শান্তিনিকেতনের টুরিস্টস্পটগুলিতে, হোটেলে, রিসর্টে সাঁওতাল নাচের এমন ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’-মার্কা শো হয়েই থাকে। কিন্তু সে সব হল প্যাকেটের ফ্রুটজুসের মতো। টাটকা খাঁটি জিনিসটা পেতে হলে এসব পালা-পরবই সেরা সুযোগ। আর নাচ তো ছুতো। পরব মানে তো মানুষ দেখা। বেড়াতে গিয়ে আসল দেখার বিষয় হল মানুষ। লাফাতে লাফাতে গিয়ে গাড়ির ড্রাইভারকে বললাম – আজ আর পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে ড্রপ করতে হবে না গো। আমরা এখানেই ফিরছি রাতে। এদিকে সে রাতে সব ঘর বুকড। ঠিক হল আমাদের রাতে শোয়ার জন্য ওরা ওদের কিচেনে বা ডাইনিং স্পেসে একটা কিছু পেতে দেবে।
পুজোটা শুরু হয়েছিল বিকেলের দিকে। ভোগের খিচুড়িও খাওয়া হয়েছিল সবাই মিলে পাত পেড়ে। কিন্তু আমরা গাড়ি চড়ে বেড়ু বেড়ু গেছিলাম বলে সে সব মিস হয়ে গেল। সন্ধ্যেবেলা যখন হাজির হলাম ওখানে, তখন সবে সবে পুজো শেষ হয়েছে। ঠাকুরমশাই শান্তিজ্জল ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। গাছতলায় পাথর ঘিরে বেড়া দেওয়া। ওই পাথরই ওদের বিগ্রহ। অন্ধকারে বিশেষ কিছুই ঠাহর করতে পারলাম না। ঠাকুরের থানের সামনে অনেকজন মহিলা গান গাইতে গাইতে গোল করে ঘুরে ঘুরে নেচে চলেছে আর ধামসা-মাদলে উত্তাল পুরুষেরা। অন্ধকারে। পুরোটাই ঘুটঘুটে অন্ধকার। ওখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি এখনও। পাহাড়-জঙ্গলের কোলে সেই আদিম অন্ধকার! অন্ধকারের গায়ে গা মিশিয়ে নেচে-গেয়ে মাতোয়ারা মানুষেরা। এইখানে এসে আমার উৎসবের ধারণা ধাক্কা খেয়ে যায়। উৎসব মানে তো আলোর রোশনাই, প্রাচুর্যের ঝলমলানি। এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত আমাদের চোখ। এখানে না এলে জানতাম না যে অন্ধকারেরও এত আলো থাকে, এত প্রাণ থাকে। ক্যামেরা বাগিয়ে এসেছি ছবি তুলতে। কিন্তু ওই আদিম আঁধারে সভ্যতার ফ্ল্যাশ ঝলকাতে লজ্জা করছিল কেমন!
অন্ধকারটা চোখ সওয়া হতে বুঝলাম ওরা সবাই একই রকম শাড়ি, একই রকম গয়না পরে বা মাথায় ঘটি-কলসি বসিয়ে নাচছে না। মানে সাঁওতালি নাচ বলতে আমরা যে বেশভূষায় পরিপাটি সামঞ্জস্যটা বুঝি তেমন কিছু নয়। অল্প কয়েকজন মহিলা একই রকমের শাড়ি পরেছে। ওই যে সবাই এ ওর সাথে বেঁধে বেঁধে লম্বা একটা চেনের মতো বানায়, সেই চেনের শুরুতে নাচছে এরা। সম্ভবত গ্রামের এক্সপার্ট নাচিয়ে মহিলার দল। এরপর দক্ষতার অর্ডারে তৈরি হয়েছে বাকি চেনটা। বাকিরা সবাই যে যার মতো শাড়িতে, অল্পবয়সীরা সালোয়ার-কুর্তিতে, ছোট মেয়েরা ফ্রকে-স্কার্টে। চেনের শেষে গ্রামের যত গেঁড়ি-গুগলির দল। ঠিক করে পা মেলাতে পারছে না পুচকিগুলো। কিন্তু নাচছে আর হি হি হা হা করে এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে। সবার কি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ! আর গ্রাম উজিয়ে সব মহিলারা যোগদান করায় এমন লম্বা চেন হয়েছে! সাঁওতালনাচের টুরিস্টি শো-এর সাথে এখানেই একটা বড় ফারাক।


এর মধ্যে ঠাকুরমশাইরা গোলাপি আবির মেখে আর ছড়াতে ছড়াতে হাজির হলেন ওদের মধ্যে। ঠাকুরমশাইদের হেড যিনি, তিনি শাঁখ বাজাচ্ছিলেন। একজন ঘাড়ে করে শান্তিজ্জলের কলসি নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর একজন একটা কুলো থেকে সবাইকে প্রসাদী শালফুল বিলিয়ে দিচ্ছিলেন। তারপর ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবাই দেখি সেই শালফুল কানের লতির ওপর দিয়ে ঝুমকোর মত ঝোলাচ্ছে। নাচিয়ে মেয়ে আর বাজিয়ে ছেলেদের দল এরপর গ্রাম পরিক্রমায় বের হল। এখন গোল গোল ঘুরে নাচ হচ্ছে না। মেয়েরা নাচতে নাচতে আড়াআড়িভাবে এগোচ্ছে। এক একটা বাড়ির সামনে এসে সেই শোভাযাত্রা থামছে। বাড়ির মেয়েরা দোরগোড়ায় ইঁট বা পাথর পেতে দিচ্ছে। ঠাকুরমশাই তাতে একটা করে পা তুলে দাঁড়ালে বাড়ির মহিলারা তেলজল দিয়ে পা ধুইয়ে দিচ্ছে আর কোঁচড় ভরে শালফুল নিয়ে ঢিপ করে পেন্নাম ঠুকে ঘরে চলে যাচ্ছে। একবার দেখলাম হেডঠাকুরমশাই এক মহিলার পা ছুঁয়ে নম করলেন। সম্ভবত তিনি ওঁর থেকে বয়সে বড় ছিলেন। সাঁওতালদের এই জিনিসটা আমার বেশ ভালো লাগল। আমাদের এখানে পুজো-পাব্বনে বয়স্ক মহিলাদের দেখি হাঁটুর বয়সী পুরুতের পায়ে মাথা ঠুকতে আর পুরুতগুলো নির্লজ্জের মতো প্রণাম গ্রহণ করে। সাঁওতাল গ্রামের পুরোহিত জাতে বামুন না, বামনাইও নাই তার। সাধারণত গ্রামেরই গণ্যমান্য কাউকে পুজো-আচ্চার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওরা বলে ‘নাইকে’। এই নাইকেমশাই গ্রামের আর কয়েকজনকে সাহায্যকারী হিসাবে বেছে নেয়। দেখলাম তাঁরাও তেলজলের পদসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না।


এই সব পা ধোওয়াধুয়ি রিচ্যুয়াল যখন যে বাড়ির সামনে হয়, সেখানে নাচগানের দল থেমে গিয়ে গোল হয়ে নাচতে থাকে। তারপর আবার এগোয়। এমনি করে করে ওরা গ্রামের পথ দিয়ে এগিয়েই চলল, এগিয়েই চলল। গ্রামের অল্প কিছু বাড়িতে সোলার প্যানেল থাকায় সে সব বাড়ির সামনেটা অল্প আলোকিত। শোভাযাত্রা সে সব জায়গায় পৌঁছাতে আমরা একটু ছবি-ভিডিও তোলার সুযোগ পেলাম। সুযোগ খোঁজার চক্করে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আমরা হাঁপিয়ে পড়ছিলাম, কিন্তু ওরা হাঁপাচ্ছিল না। একভাবে তালে তাল মিলিয়ে কোমর নিচু করে নেচেই চলেছে একনাগাড়ে। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে নাচের চেনটা ছোট হচ্ছিল। কিন্তু নাচ ছাড়লেও হাঁটা থামছিল না কারোর। সবাইয়ের সাথে ধামসা-মাদলের তালে হেঁটে হেঁটে গ্রাম ঘুরতে কি যে আনন্দ হচ্ছিল! গ্রামের শেষ মাথায় এসে অনেকক্ষণ ধরে নাচানাচি হল। এর মধ্যে এক মাদল-বাদক এসে হঠাৎ বলে গেল – এখানে আমরাই থাকি। এখানে আপনাদের কোনো ভয় নেই। কি মুশকিল! হঠাৎ ভয়ের কথা কেন? আমরা ভয় পাইনি, ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারণও ছিল না। মথুরদাকেও দেখলাম পুরো সময়টা আমাদের নিঃশব্দে পাহারা দেওয়ার মতো অনুসরণ করে গেল। তবে কি ভয় পাওয়াটাই দস্তুর এখানে? মানে আর কি আমরা যারা ভারতে নয়, ‘ইন্ডিয়া’য় থাকি তারা এমন পরিবেশে দারুণ ঘাবড়ে থাকব, এমনটাই প্রত্যাশিত? কি ন্যাকা না আমরা? কি অসহ্যরকমের ন্যাকা!
আর ওরা কি আশ্চর্যরকমের কেয়ারিং!
বাহা-পরবের চলচ্ছবি
আরও উৎসবের গল্প শুনতে পালাপাব্বন-এ টোকা মারুন।

Wander with Reshmi & Saikat