[Excerpt: Manipuri Rasa is an important classical dance tradition of India. Rasa is dedicated to Lord Krishna aka Sri Govindaji. Basantarasa, one of the five forms of Rasa is performed in the full moon day of Manipuri month of Sajibu (during March-April). This blog is featured on experiencing the spectacular, still soulful event of Basantarasa held in Sri Govindaji Temple of Imphal, Manipur. For further details, please write down your queries in the comment box]
শেষ কবে মাঝরাত্তিরে ঘরের জানলায় নাক ঠেকিয়ে পূর্ণিমা দেখেছি মনে পড়ে না। ওসব খালি বেড়াতে গেলেই হয়। হয় না। হওয়াই। ক্যালেণ্ডার দেখে কিছু কিছু জোছনার গায়ে ইটিনেরারি সাঁটি, গড়ে তুলি সফল ভ্রমণ। বাদবাকি সব গোলপানা চাঁদবেলায় দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে থাকি। যেমন করে এই বৈশাখী পূর্ণিমারাতে ঘুমিয়ে আছে সারা ইম্ফল, ঘুমিয়ে আছে সারা মণিপুর, সারা ভারতবর্ষ, সারা পৃথিবী। কেউ তো জানলই না কেমন টলটলে পূর্ণিমা আজ আকাশ জুড়ে, কেমন জ্যোৎস্না দিয়ে গড়া দুধসাদা শ্রীগোবিন্দজি মন্দির, সাদা থাম থেকে থামে টানা সাদা পর্দা, চাঁদোয়ার মত সাদা আলোর মালা। আর নেমে এসেছে চাঁদ টুকরো টুকরো হয়ে। নেচে চলেছে। ঘুরে ঘুরে। ঘিরে ঘিরে। সবার পরণে সেই ড্রামের মতো দেখতে লাল রঙের মণিপুরী নাচের ঘাঘরা। জ্যোৎস্নার মত স্বচ্ছ ওড়নার আড়ালে ঝিলিক মারা হাসি, কটাক্ষ, ভক্তি, ক্লান্তি। ওরা সত্তর-আশিজন হবে। রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি গর্ভগৃহ থেকে বের করে এনে মন্দিরের চাতালে ওদের মধ্যিখানে রাখা। ওরা গোপীর দল। রাধাকৃষ্ণকে ঘিরে মণিপুরী রাসলীলা হচ্ছে। বসন্তরাস। মণিপুরী সাজিবু-মাসের (চৈত্র-বৈশাখের সমসাময়িক) পূর্ণিমা তিথি আজ। মণিপুরী নাচের শো নয় কোনো। মন্দিরের রাসলীলা। বিশুদ্ধ ধর্মাচার। সংস্কৃতির গোড়ার কথা।
ধর্ম শব্দটার মধ্যে একটা নেগেটিভ ভাইব এসে গেছে অপব্যবহারের বাড়াবাড়িতে। বেনোজল সরালে পড়ে থাকে যা কিছু অহিংস, যা কিছু আন্তরিক, যা কিছু নান্দনিক, তার চোখে চোখ মেললেই অন্ধত্ব ঘুচে যায় কেমন! খুব যেন চেনা চেনা লাগে মণিপুরী কীর্তনের সুর। বছর চারেক আগে তুরস্কের কোনিয়া শহরে সুফি দরবেশদের ঘুরে ঘুরে নাচের এমন এক সাধনা দেখেছিলাম। সেটাও নাচের শো ছিল না, সাধনাই ছিল। সেদিনের সেই সুফি সুরের মধ্যে কি এক হাহাকার ছিল! কি ভীষন আকুতি ছিল! মিলে মিলে যাচ্ছে মণিপুরী রাসলীলার গানের সুরে। একই তো চাঁদ জ্যোৎস্না বেছায় তুরস্কে আর মণিপুরে। তত্ত্বকথার পোস্টমর্টেমে যাও, সেই জীবাত্মা আর পরমাত্মার মিলমিশের গল্পই। থাক। ওসব আমার বোধের আর বুদ্ধির নাগালের বাইরে। আমি খালি সীমারেখার উপর দিয়ে চাঁদমাখা আনন্দের সেতু গড়েই খুশি থাকি।
খুশির চাঁদের গায়েও না-বোঝার খুঁতখুঁতানি কলঙ্ক হয়ে আটকে থাকে। রাত আটটা থেকে রাত দুটো অবধি রাসলীলা দেখি, তবু শেষ পর্যন্ত মণিপুরী রাসনৃত্য আমাদের বর্ণনায় কেবল হাত আর কোমর বাঁকানো স্লো নাচ হয়েই থেকে যায়। বুঝি না নাচের ভাষা। রাসলীলা শুরুর আগে ফুটফুটে সাজুগুজুদের সেলফির ভাষা সিলেবাসে কমন পড়ে শুধু। বুঝি না সিনিয়র গোপীদের চোখ থেকে জল গড়ায় কেন! কেন ধরা গলা খাঁকড়ে নাক টানে গান-গাওয়া মহিলারা! কেন? কেন? একটা মাটি-পাথরের মূর্তি বই তো নয়! তাকে নিয়ে এত আবেগ! নাগাল পাই না! ছোটবেলা থেকে ভূতে ভয় ছিল না আমার। যেসব রোমহর্ষক ভূতের গল্প পড়ে বা সিনেমা দেখে বন্ধুদের রাতের ঘুম উড়ে যেত, আমার সেসব ওআরএসের মত বিস্বাদ লাগত। বারবার মনে হত একটু ভূতের ভয় থাকা বড় দরকার ছিল। এখানে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল একটু ভগবানে ভক্তি থাকলে মন্দ হত না। অন্তত ওদের মনের মধ্যে ঢুকে একটু উঁকি মেরে আসা যেত। এত সর্ষেতলা পা নিয়ে হচ্ছেটা কী? দিনের শেষে আমি তো সেই আমি-ই থেকে যাচ্ছি।
যার আর কিছু নেই তার ক্যামেরা আছে। ব্যাগভরে হরেক কিসিমের লেন্স আছে। ডাইনে-বাঁয়ে উপর-নিচে হরেক রকমের অ্যাঙ্গেল আছে, শাটার স্পিডের কেরামতি আছে। স্থানীয়রা কি আর বোঝে ওসব ধোঁকার টাটি? দুজন ক্যামেরাধারী কলকাতা থেকে উজিয়ে এসেছে রাসলীলা দেখবে বলে, শুরু থেকে শেষ রাত জাগছে ওদের সাথে, ওদের মতোই সাদা পোশাক পরেছে। আমাদের ঘিরে থাকে সম্ভ্রমভরা চোখ, প্রশ্রয়ভরা চোখ, কৃতজ্ঞতাভরা চোখ। চারমাস আগে যখন প্রথমবার মণিপুর এসেছিলাম, তখন থেকেই মণিপুরীদের স্বাজাত্যবোধ আমাদের অবাক করে আসছে। আর বারবার এ ব্যাপারে বাঙালিদের সাম্প্রতিক দৈন্যটা খুব প্যাঁটপ্যাঁট করে চোখে পড়ছে। তবু তো কজন আছি বাকি! রাসলীলার আসরে এক বুড়ো দাদু এসে গর্ব করে বলে যায় তার ঠাকুরদা শান্তিনিকেতনে মণিপুরী নাচের গুরু ছিলেন; রবি ঠাকুর অ্যাপয়েন্ট করেছিলেন। শুনে বুকের ভেতর ভালো-লাগা গুমগুম করে ওঠে।
রাসলীলা শেষ হতেই সেইসব চাঁদ বেয়ে নেমে আসা গোপীরা আগের মতোই পৃথিবীর মানুষ হয়ে যায়। লেজের প্যাকেট খুলে চিপস খাওয়া মানুষ, হুড়োহুড়ি করে পুজোর ফুলপাতা-আবির কুড়োনো মানুষ, হইহই আড্ডাবাজিতে মেতে ওঠা মানুষ। সেইসব চেনা চেনা ছবিও ভ্যাবলার মতো দেখতে দেখতে খেয়াল হয় রাত দুটো বেজে গেছে। ইম্ফল এমন জায়গা, যেখানে সন্ধ্যে হলেই দোকানপাটে ঝাঁপ পড়ে যায়; রাস্তাঘাট শুনশান। সেখানে সন্ধ্যে সাতটার সাথে রাত্তির বারোটার কোনো তফাত নেই। সেই ইম্ফলে রাত দুটোয় হোটেলে ফিরব কীভাবে? আগের দিন ইম্ফলে ভোট গেছে। রাত-রাস্তায় মিলিটারি টহল। মন্দিরের এক কোণায় বসে তবে কাটিয়ে দিই বাকি রাত? নাকি নাচ করতে আসা মেয়েদের বা বাকি দর্শকদের বলব একটূ ড্রপ করে দিতে? ভাষা জানি না যে! বলব কেমন করে? অল্প অল্প ইংরেজি জানা কিরণকুমার সব জেনেটেনে একটা গাড়িকে বলে দেয় হোটেলে পৌঁছে দিতে। কিরণকুমার শ্রীগোবন্দজি মন্দিরের অনেক পুরোহিতদের মধ্যে একজন। গাড়িটা একটু বেশি টাকা দাবি করেছিল রাতবিরেতে বলেই, কিরণকুমার এমন লজ্জা পেতে লাগল যেন সেটা ওরই দোষ। হোটেলের কাছে পৌঁছে ড্রাইভারের ফোন বেজে ওঠে। ঠিকঠাক পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তো আমাদের? ঢোঁক গিলতে গিলতে ভাবি এইজন্যই ফর্মাল ভক্তি-ফক্তি কাজে আসে না আমাদের। বহুরূপে সম্মুখে আমার……
তোমার?
সেইসব ক্যামেরা-বন্দি মুহূর্তেরা


















