Singti is a rural area under District Howrah of West Bengal, India. Here, in winter potatoes grow in abundant. On the first day of the Bengali month of Magh (mid-January) a big fair called ‘Bhai Khan Pirer Mela’ is held in Singti. This is the biggest fair of Howrah District.This is also referred as ‘Alur Damer Mela’ (Fair of potato curry) as ‘Alur Dam’ is the highlight of this occasion. Hundreds of sellers gather here to sell ‘Alur Dam’. This is a celebration for successful harvest of ‘Alu'(potato).
‘ভিডিও করতেচে রে’, ‘কোন কাগজ থেকে?’, ‘টিভিতে দ্যাকাবে?’ – একযুগ পর শুনলাম এসব কথা। আজ থেকে প্রায় আট-ন বছর আগে যখন কুমোরটুলির ঠাকুর গড়া, বাগবাজারে সিঁদুরখেলা কি ইস্কনের রথের ছবি তুলতে যেতাম, তখন গলায় এস এল আর ক্যামেরা দেখে লোকজন এমন প্রশ্ন করত। আজকাল লোকের কাছে এসব নেহাত জলভাত হয়ে গেছে। তাই এবার সিংটিতে ভাই খাঁ পীরের মেলা দেখতে গিয়ে যখন লোকজনকে আগের মতোই সরল বিশ্বাস থেকে প্রশ্ন করতে দেখলাম, সেটা বেশ একটা নতুন রকমের ব্যাপার ছিল। সিংটির মেলাটা গ্রামের মেলা হতেই পারে, কিন্তু মোটেই প্রত্যন্ত গ্রাম নয়। কোলকাতা থেকে মোটে চুয়ান্ন কিমি দূরে, হাওড়া-হুগলির বর্ডারে বাসরাস্তার একদম কাছেই মেলাটা। যে রাস্তা দিয়ে দিল্লী পাবলিক স্কুল ডোমজুড়ের উজ্জ্বল হলুদ স্কুলবাস চকচকে পড়ুয়াদের তুলতে তুলতে যায়। যে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কোলকাতায় কাজ করতে আসেন। যে মেলায় ঘুরতে আসা অল্পবয়সীদের সাজ-পোশাকে, হাবভাবে কলকাত্তাইয়া কেতা নকল করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চোখে পড়ে, যেখানে পাড়াগেঁয়ে মনসাপুজোতেও ডিজে না এলে ঠিক মস্তি হয় না, সেইখানে সেই সিংটিতে লোকে এখনও মেলায় এস এল আর নিয়ে ঘুরতে আসা লোক দেখলে এমন অবাক হয়! আসলে বিস্তর ‘ক্যাল কানেকশন’ সত্ত্বেও শহুরে লোকেদের মোটেই এ মেলায় বেড়াতে আসতে দেখা যায় না। কারণ এ মেলার কথা শহরে বিশেষ কেউ জানেই না। আসলে অবাকটা আমাদেরই হওয়ার কথা। আমরা মুঠোয় স্মার্টফোন ভরে দুনিয়াদারি করে বেড়াই, কিন্তু ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ এমন একটা অন্যরকম গ্রামীণ মেলা যে প্রতি বছর পয়লা মাঘে বসে সে খবর কেউ রাখি না।
এবার বলি মেলাটা কেন অন্যরকম।
নতুন ধান ওঠার উদযাপন যেমন নবান্নে-পিঠেপুলিতে, তেমনি নতুন আলুর আনন্দও কি বাদ দিলে চলে? সিংটি সংলগ্ন এলাকায় অনেক আলুচাষ হয়। পয়লা মাঘে সিংটিতে একটা গোটা মাঠ জুড়ে আলুর দমের মেলা হয়। প্রায় শ’খানেক মানুষ মাঠের নানা জায়গায় কাঠকুটো বা স্টোভ জ্বালিয়ে আলুর দম রাঁধেন। বড় বড় হাঁড়িতে বগবগ করে ফুটছে আলুর ঝোল। আর ঘিরে বসে সারাদিন ধরে হাজার হাজার মানুষ সপরিবারে কলাপাতায় আলুর দম দিয়ে মুড়ি মেখে খাচ্ছেন। আলুর দম এখানে ওজনে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ত্রিশ টাকা।



সিংটির মেলা কিন্তু শুধু আলুর দমের মেলা নয়। মেলা চত্বরের তিনভাগের এক ভাগ আলুর দমের ফুড কোর্ট। এরপর আকর্ষণ নাম্বার টু হল কাঁকড়া। অসংখ্য মানুষ সার বেঁধে কাঁকড়া বেচতে বসেন। এঁরা ক্যানিং থেকে আসেন। ক্যানিং কিন্তু অনেক দূর এখান থেকে। হাওড়া জেলার এই ভুঁই খাঁ পীরের মেলার সাথে ক্যানিং-এর কাঁকড়া বিক্রেতাদের যোগাযোগ কিভাবে গড়ে উঠল জানি না। ছোট চিতি কাঁকড়া থেকে শুরু করে ইয়াব্বড়ো-বড়ো জাম্বো কাঁকড়া। সে সব কি আর দেখে-টেখে খালি হাতে ফিরেছি? মেলা থেকে কেনা অসাধারণ সুস্বাদু কাঁকড়ার ঢেকুর তুলতে তুলতে এই যে লিখছি এখন – এ পুরো রাজকীয় মেজাজ!!


গ্রামের মেলার চেনা ছবি, মানে ওই জিলিপি-ঘুগনি চরকা-বেলুন খেলনা-ভেঁপু নাগরদোলা এসব সিংটিতেও ছিল বৈকি, কিন্তু বিশাল বড়ো মেলার আয়তনের তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল কম। এই মেলার বিশেষত্ব হল বিশেষ বিশেষ কিছু জিনিসের অনেক বেশি সংখ্যক দোকান এবং একই রকম জিনিসের একই জায়গায় পাশাপাশি দোকান। আলুর দমের মাঠ বা কাঁকড়ার গলির মতো একটা গলিতে সার সার মাছ ধরার জাল ঝুলছে, এক জায়গায় পাশাপাশি অজস্র বঁটির দোকান, একটা গলি জুড়ে খালি ‘বেতের বোনা ধামা-কুলো’। আর একটা ফলের গলি – ঢেলে বিকোচ্ছে কুল আর শাঁকালু। বেশির ভাগই কেজো জিনিস। তাই সব্বাই এখান থেকে কিছু না কিছু কিনছেনই।





যতদূর চোখ যায় আলু আর হলুদে হলুদ সর্ষেখেতের মধ্যেকার সরু আলপথ বেয়ে রঙচঙে পিঁপড়ের চলমান সারি। দূর দূর গ্রাম থেকে সেজেগুজে ঝলমলে পোশাক পরে লোক আসছে – এসেই চলেছে। একদিনের মেলা। লোক হয় লাখ খানেকের বেশি। মাইকে সর্বক্ষণ হারিয়ে যাওয়া সঙ্গীর জন্য ঘোষণা চলছে একনাগাড়ে। ধাক্কাধাক্কি ভিড়ভাট্টা। কাতারে কাতারে মাথা। মাথার ওপর ঝুড়ি-কুলো। আগে যখন গাড়িঘোড়ার তেমন সুবিধা ছিল না, তখন সেই সক্কাল সক্কাল উঠে কত দূর দূরান্ত থেকে লোকে হেঁটে হেঁটে আসত এখানে। মেলা থেকে ঝুড়ি কিনে তারই মধ্যে মুড়ি আর আলুর দম মেখে খেত তারা। এখন জীবনে গতি এসেছে। বেলা করে বাড়ি থেকে খেয়ে-দেয়ে বেরোনো যায়। তাই এক ধামা মুড়ি খেয়ে সারাদিন পেট চালানোর দায় নেই কারো। এখন ছোট ছোট প্লাস্টিক প্যাকেটে মুড়ি বিকোয়, আলুর দম বিকোয়। তারপর মুড়ি আর আলুর দমের গতি হয়ে যায়, শুধু হাওয়ায় ওড়ে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক। হাজার হাজার প্লাস্টিক। শহরের লোক আসুক বা না আসুক। শহরের এসব বিষ ঠিক উড়ে এসে জুড়ে বসে।
কারণ জুড়ে বসতে দেওয়া হয়।


Wander with Reshmi & Saikat